ডেস্ক রিপোর্ট :
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে এবং নথিপত্র পরীক্ষা করে ৭৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বড়ো অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির সন্ধান মিলেছে। ফাঁকি হওয়া ভ্যাটের পরিমাণ ৩৮৯ কোটি টাকা। ফাঁকির এ তালিকায় স্বল্প পরিচিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমা কোম্পানি, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তালিকায় রয়েছে বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত এবং অফডকের প্রতিষ্ঠানও।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ এসব ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। ভ্যাট ফাঁকি ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষায়িত বিভাগ ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানে এসব ফাঁকির সন্ধান মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অভিযান ছাড়াও বিশেষায়িত নিরীক্ষা ও তদন্তের মাধ্যমেও বেশ কিছু ফাঁকি ধরতে সমর্থ হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ। এরই মধ্যে ফাঁকি স্বীকার করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধও করেছে।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আলী আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ফাঁকির ঘটনা বেশ ব্যাপক। রাজস্ব প্রশাসনকে এ বিষয়টি শক্তভাবে দেখা দরকার। সেই সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রমও জোরদার করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এনবিআরের প্রশাসনিক দুর্বলতা, জনবলের ঘাটতি, অদক্ষতা ও ক্ষেত্রবিশেষে দুর্নীতির কারণে অনেক ফাঁকি ধরা যায় না। এক্ষেত্রে ফাঁকির ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার।
শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোর পাশাপাশি বিশেষায়িত একাধিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। এর মধ্যে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) ছাড়াও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগ দেশব্যাপী রাজস্ব ফাঁকি ধরতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে আকস্মিক অভিযান ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র জব্দ করে বিশেষায়িত নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব প্রক্রিয়ায়ই বড়ো অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি বের হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নিরীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমেই উদ্ঘাটন হয়েছে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট ফাঁকি। আলোচ্য সময়ে ৪৭টি প্রতিষ্ঠানে ২২৫ কোটি টাকার ফাঁকি বের হয়েছে। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৫ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া তদন্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ছয় কোটি টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটনের বিপরীতে আদায় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। আর আকস্মিক অভিযানে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৫৯ কোটি টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটনের বিপরীতে আদায় হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের সবমিলিয়ে ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি বের হয়েছে ৪৭১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৩১ কোটি টাকা।
ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামীতে ফাঁকি উদ্ঘাটনে আরো গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিভিন্ন উত্স থেকে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য বের করার ক্ষেত্রে নতুন করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে জোর দেওয়ার পাশাপাশি খাতভিত্তিক রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোকে নিরীক্ষার আওতায় আনা হবে। এর মধ্যে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে অধিক রাজস্ব ফাঁকির খাতগুলোকে চিহ্নিত করে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র - ইত্তেফাক
0 মন্তব্য